
অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবার: জনস্বাস্থ্যের এক নীরব সংকট
বিশ্বজুড়ে, বিশেষ করে উন্নত দেশগুলিতে, আমাদের খাদ্যাভ্যাস দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। আধুনিক জীবনের ব্যস্ততার সাথে তাল মিলিয়ে, সুবিধাজনক এবং সহজে প্রাপ্য অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবারের (Ultra-processed foods – UPFs) চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে। কিন্তু এই আপাতদৃষ্টিতে নিরীহ খাবারগুলি কি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য এক নীরব হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে? সম্প্রতি, ইউনিভার্সিটি অফ মিশিগান কর্তৃক ২০২৫ সালের ২৮শে জুলাই ১৪:০৮ মিনিটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন এই প্রশ্নটিকেই জনস্বাস্থ্যের এক গুরুতর সংকট হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবার কী?
অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবার হলো এমন সব খাদ্যপণ্য যা শিল্প কারখানায় তৈরি এবং যেখানে সাধারণত ৫টি বা তার বেশি উপাদান থাকে। এই উপাদানগুলির মধ্যে প্রায়শই লবণ, চিনি, অস্বাস্থ্যকর ফ্যাট, অ্যাডিটিভস (যেমন – রং, ফ্লেভার, প্রিজারভেটিভ) এবং কৃত্রিম মিষ্টি অন্তর্ভুক্ত থাকে। এই খাবারগুলি সাধারণত তাদের আসল খাদ্য উৎস থেকে বহু দূরে থাকে এবং পুষ্টিগুণে খুবই কম হয়, কিন্তু ক্যালোরিতে ভরপুর থাকে। প্লেইন রুটি, পাস্তা, ব্রেকফাস্ট সিরিয়াল, কেক, কুকিজ, স্ন্যাকস, রেডি-টু-ইট মিল, সফট ড্রিঙ্কস, ক্যান্ডি, ফাস্ট ফুড – এ সবই অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবারের উদাহরণ।
কেন এটি একটি সংকট?
ইউনিভার্সিটি অফ মিশিগানের প্রতিবেদনটি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছে যে অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবারের প্রতি আসক্তি জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি বড় সংকট। এর কারণগুলি হলো:
-
আসক্তির সম্ভাবনা: এই খাবারগুলিতে চিনি, লবণ এবং ফ্যাট-এর যে বিশেষ মিশ্রণ ব্যবহার করা হয়, তা আমাদের মস্তিষ্কের পুরষ্কার কেন্দ্রকে (reward centers) উদ্দীপ্ত করে। এর ফলে, এই খাবারগুলি খাওয়ার পর এক ধরণের আনন্দ অনুভূতি হয়, যা বারবার এই খাবারগুলি খাওয়ার আকাঙ্ক্ষা তৈরি করে। ঠিক যেমন মাদক বা তামাকের প্রতি আসক্তি জন্মায়, তেমনি এই খাবারগুলির প্রতিও আসক্তি তৈরি হতে পারে, যা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন।
-
স্থূলতা ও বিপাকীয় রোগের ঝুঁকি: অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবারগুলিতে ক্যালোরির পরিমাণ বেশি হলেও পুষ্টিগুণ কম থাকে। অতিরিক্ত ক্যালোরি গ্রহণ এবং কম পুষ্টির কারণে স্থূলতা দেখা দেয়। স্থূলতা আবার ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং নির্দিষ্ট কিছু ক্যান্সারের মতো নানা ধরণের বিপাকীয় রোগের (metabolic diseases) ঝুঁকি বাড়ায়।
-
পুষ্টির অভাব: এই খাবারগুলি আমাদের শরীরকে প্রয়োজনীয় ভিটামিন, মিনারেল এবং ফাইবার সরবরাহ করে না। ফলে, যারা এই খাবারগুলি বেশি খান, তাদের মধ্যে পুষ্টির ঘাটতি দেখা দিতে পারে, যা সামগ্রিক স্বাস্থ্যকে দুর্বল করে।
-
মানসিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব: কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে, অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবারের অতিরিক্ত গ্রহণ উদ্বেগ, বিষণ্ণতা এবং মেজাজের পরিবর্তনের সাথে সম্পর্কিত হতে পারে।
-
অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব: এই রোগগুলির চিকিৎসা ব্যয়বহুল এবং দীর্ঘমেয়াদী। পাশাপাশি, অসুস্থতার কারণে কর্মক্ষমতা কমে যাওয়ায় ব্যক্তি ও সমাজের উপর অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি হয়।
কীভাবে আমরা এই সংকট মোকাবিলা করতে পারি?
ইউনিভার্সিটি অফ মিশিগানের প্রতিবেদনটি কেবল সমস্যা তুলে ধরেই থেমে থাকেনি, বরং সমাধানের পথও দেখিয়েছে। আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে এই সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব:
-
সচেতনতা বৃদ্ধি: সাধারণ মানুষকে অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবারের ক্ষতিকর দিক এবং এর আসক্তি সৃষ্টিকারী ক্ষমতা সম্পর্কে অবগত করতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্য সংস্থা এবং গণমাধ্যম এই ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
-
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস প্রচার: যতটা সম্ভব তাজা, আসল এবং কম প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত। ফল, সবজি, শস্য, ডাল এবং স্বাস্থ্যকর প্রোটিন-এর উপর জোর দেওয়া প্রয়োজন।
-
খাদ্য নীতির সংস্কার: সরকার এবং নীতি নির্ধারকদের উচিত অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবারের উৎপাদন, বিপণন এবং সহজলভ্যতা নিয়ন্ত্রণের জন্য কার্যকর নীতি প্রণয়ন করা। খাবারের প্যাকেজিং-এ পুষ্টি সংক্রান্ত তথ্য স্পষ্ট এবং সহজবোধ্যভাবে উল্লেখ করা, এবং এই ধরণের খাবারের উপর কর বৃদ্ধি করা যেতে পারে।
-
খাদ্য শিল্পে পরিবর্তন: খাদ্য প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলিকে তাদের পণ্যের উপাদান এবং প্রক্রিয়াকরণের পদ্ধতি পরিবর্তন করে স্বাস্থ্যকর বিকল্প তৈরি করার জন্য উৎসাহিত করা উচিত।
-
ব্যক্তিগত উদ্যোগ: আমাদের প্রত্যেকের নিজের খাদ্যাভ্যাসের প্রতি মনোযোগ দিতে হবে। কখন, কী খাচ্ছি, কেন খাচ্ছি – এই প্রশ্নগুলি নিজেদের করা উচিত। ধীরে ধীরে, অভ্যাস পরিবর্তন করে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন শুরু করা প্রয়োজন।
অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবার আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি অংশে পরিণত হয়েছে। কিন্তু ইউনিভার্সিটি অফ মিশিগানের এই গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদনটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, এই সুবিধাগুলি হয়তো একটি বড় জনস্বাস্থ্য সংকটের জন্ম দিচ্ছে। স্বাস্থ্যকর খাদ্য পছন্দ এবং সচেতনতার মাধ্যমেই আমরা আমাদের এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বাস্থ্য রক্ষা করতে পারি। আসুন, আমরা সকলে মিলে এই নীরব যুদ্ধ জয় করি।
Ultra-processed food addiction is a public health crisis
এআই সংবাদ সরবরাহ করেছে।
নিচের প্রশ্নটি Google Gemini থেকে প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়েছে:
‘Ultra-processed food addiction is a public health crisis’ University of Michigan দ্বারা 2025-07-28 14:08 এ প্রকাশিত হয়েছে। অনুগ্রহ করে সম্পর্কিত তথ্য সহ নরম সুরে একটি বিশদ নিবন্ধ লিখুন। অনুগ্রহ করে বাংলায় শুধুমাত্র নিবন্ধ সহ উত্তর দিন।